খালি পেটে ছোলা খাওয়ার উপকারিতা, সৃষ্টিকর্তার দেওয়া অসংখ্য সুপারফুড
এর মধ্যে একটি হলো কাঁচা ছোলা, স্বাস্থ্যকর অভ্যাস এর একটি চমৎকার গাইডলাইন।
কাঁচা ছোলা আমাদের খাদ্যাভ্যাস এর একটি প্রাচীন উপাদান এবং তার পুষ্টিগুণ অনেক।
এটি এমন একটি খাবার যা
আমাদের শরীরের জন্য পুষ্টির চাহিদা পূরণে অবিশ্বাস্য ভূমিকা পালন করে। আদিম কাল
থেকেই কাঁচা ছোলা খাওয়া স্বাস্থ্য সচেতনতার একটি রেগুলার রুটিন ছিল। এটি খালি
পেটে খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। কাচা ছোলায় রয়েছে ফাইবার,
ভিটামিন,প্রোটিন এবং খনিজের অন্যতম উৎস।
ছোলা আমাদের কাছে একটি অতি
পরিচিত প্রিয় খাবার। রান্না করা ছোলা খেতে আমরা সবাই খুবই পছন্দ করি, কিন্তু
বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা ছোলা রান্না করে খাওয়ার চেয়ে কাঁচা ছোলা ভিজিয়ে রেখে
খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কেননা কাঁচা ছোলা মানব স্বাস্থ্যের জন্য খুবই
উপকারী। খালি পেটে কাঁচা ছোলা খাওয়ার উপকারিতা যথাযত পেতে হলে এই খাবার খাওয়ার
সঠিক নিয়ম জানা খুবই প্রয়োজনীয়। কেননা এটা নিশ্চিত করে যে ছোলার আসল পুষ্টিগুণ
বা উপাদান শোষিত হচ্ছে এবং আমাদের শরীর যথাযথ ভাবে তার সর্বোচ্চ উপকারিতা
পাচ্ছে।
খালি পেটে ছোলা খাওয়ার সঠিক নিয়মের প্রথম ধাপ হচ্ছে ভালোভাবে সর্বনিম্ন ৬-৭
সাত ঘন্টা পরিষ্কার পানিতে ভিজিয়ে রাখা, এটি ভেজানোর ফলে নরম হয় যা সহজে হজম
করতে সহায়তা করে। ছোলা ভিজিয়ে রাখার ফলে এর প্রাকৃতিক
এন্টি-নিউট্রিয়েন্ট দূরীভূত করে এবং এতে থাকা জিংক, ম্যাগনেসিয়াম এবং আয়রন
যথাযথভাবে শোষিত হয়। ছোলা খাওয়ার সব থেকে ভালো সময় হলো সকালবেলা খালি পেটে খাওয়া। আপনারা চাইলে
ছোলার সাথে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। মধুর সাথে ছোলা মিশিয়ে খাওয়ার ফলে এর এর
পুষ্টিগুন দ্বিগুণ বেড়ে যায়, যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। মধু এবং ছোলা
শারীরিক শক্তি বাড়ায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
কাঁচা ছোলা খাওয়ার পুষ্টিগুণ
খালি পেটে কাঁচা খাওয়ার ফলে আমাদের দেহের পুষ্টি চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা পালন করে। কাঁচা ছোলাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার, প্রোটিন, আইরন,
ভিটামিন বি৬ এবং ম্যাগনেসিয়াম। এই উপাদানগুলো শরীরের রূপ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
করে এবং শরীরকে শক্তি যোগায়। হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে আয়রন কার্যকরী ভূমিকা পালন
করে, যা মানব দেহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ম্যাগনেসিয়াম হার্ট কে সুস্থ
রাখে এবং স্নায়ুতন্ত্রকে সুরক্ষিত করে। প্রোটিনের অন্যতম একটি প্রাকৃতিক উৎস
হচ্ছে কাঁচা ছোলা এবং এটি একটি পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার যা আপনার শরীরকে সক্রিয়
রাখতে সাহায্য করে।
ভিটামিন b6 মানবদেহে শক্তির উৎপাদনের প্রক্রিয়াকে সক্রিয় করে এবং মস্তিষ্কের
কার্যক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। কাঁচা ছোলা হচ্ছে টেন এবং কার্বোহাইডেটের
অন্যতম একটি উৎস, যা মানব দেহের প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করে। খালি পেটে নিয়মিত
কাঁচা ছোলা খাওয়ার ফলে রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং এটি
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি অনেকটাই কমায়। কাঁচা ছোলা একটি ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার যার
কারনে কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে এবং নিয়মিত কাঁচা ছোলা খাওয়ার ফলে ব্লাড প্রেসার
নিয়ন্ত্রণে থাকে। এছাড়াও কাঁচা ছোলায় রয়েছে অসংখ্য পুষ্টিগুণ যা মানব দেহের
জন্য অত্যন্ত উপকারী।
হজম শক্তি উন্নত ও ওজন নিয়ন্ত্রণ
কাঁচা ছোলা আমাদের পরিপাকতন্ত্রের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কাঁচা ছোলা
রয়েছে প্রচুর এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবার যা পাকস্থলীতে বিভিন্ন উপকারী
ব্যাকটেরিয়া তৈরীর মাধ্যমে হজম শক্তিকে উন্নত করতে সহায়তা করে। ফাইবার
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। ফাইবার অন্ত্রনালীর
কার্যক্ষমতা কে সক্রিয় করে যা খাদ্য সঠিকভাবে এবং দ্রুত হজম করতে সহায়তা করে
হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। শরীরে থাকা টক্সিক উপাদান বের করে দিতে গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা পালন করে। কাঁচা ছোলায় ক্যালরির পরিমাণ ও গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ও কম থাকে
ফলে দীর্ঘক্ষণ পেয়ে ধরা থাকে। যার কারনে অতিরিক্ত খাওয়ার ঝুঁকি কমে যায়।
ভেজানো ছোলা পুষ্টিগুণে ভরপুর। ফাইবার ও প্রোটিনে পরিপূর্ণ এবং ভেজানো ছোলাতে
ক্যালোরির পরিমাণ ও একবারেই কম। ওজন কমাতে বা নিয়ন্ত্রণ করতে কাঁচা ছোলা হতে
পারে আপনার ডায়েটের অন্যতম সেরা সঙ্গী। কাঁচা ছোলায় উচ্চমাত্রার ফাইবার থাকার
ফলে দীর্ঘক্ষণ পের ভরা থাকে, যার ফলে খুদা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। অতিরিক্ত
খাবার খাওয়ার ফলে অনেকের স্বাস্থ্য বা ওজন বাড়ার সমস্যায় ভোগেন, তাদের জন্য
কাঁচা ছোলা হতে পারে একটি স্বাস্থ্যকর খাবার। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে
কাঁচা ছোলা খাওয়ার অভ্যাস মানুষের ওজন নিয়ন্ত্রণে এবং শরীরকে কর্মক্ষম রাখতে
সহায়তা করে।
হাড় শক্তিশালী ও শর্করা নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী
কাঁচা ছোলা মানব দহের হাড়ের শক্তি বাড়ানোর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি
খাবার। কাঁচা ছোলাতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম, যেটা
হাড়ের গঠনকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে সাহায্য করে। ক্যালসিয়াম হাড়ের ঘনত্ব
বাড়ানোর মাধ্যমে হাড় কে শক্তিশালী করে তোলে, অপরদিকে ম্যাগনেসিয়াম
ক্যালসিয়ামের শোষণ প্রক্রিয়াকে সহজ করে আহারের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে অত্যন্ত
কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। ভেজানো কাঁচা ছোলায় বিদ্যমান আয়রন, ভিটামিন,
ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম এবং জিংক বোন মিনারেল ডেনসিটি কে উন্নত করে
এবং বয়সের সাথে সম্পর্কিত রোগ বালাই দূর করে।
খালি পেটে কাঁচা ছোলা খাওয়ার ফলে রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে একটি
অসাধারণ ভূমিকা পালন করে। ভেজানো কাঁচা ছোলায় রয়েছে কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট
এবং ফাইবার। কাঁচা ছোলাতে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ও কম যার ফলে এটি হঠাৎ রক্তের
শর্করার পরিমাণ বেড়ে যাওয়া রোধ করে ধীরে ধীরে রক্তশর্করা বাড়াতে
সহায়তা করে। ছোলার আঁশ রক্তে উপস্থিত গ্লুকোজের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং
রক্তে শর্করার স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। কাঁচা ছোলা ডায়াবেটিস
রোগীদের জন্য একটি আদর্শ খাবার। কারণ এটি রক্তে ইনসুলিনের ভারসাম্য বজায় রাখতে
সহায়তা করে এবং খাবারের পর শর্করার মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি রোধ করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও স্বাস্থ্যকর ত্বক
কাঁচা ছোলা হচ্ছে ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ একটি খাবার। এটি
মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। ভেজানো ছোলায় রয়েছে
প্রচুর পরিমাণ আয়রন যা মানবদেহে লোহিত রক্ত কণিকার উৎপাদন বাড়িয়ে অ্যানিমিয়ার
সমস্যা প্রতিরোধে সহায়তা করে। তাছাড়াও কাঁচা ছোলায় রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম,
পটাশিয়াম, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি৬। শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে
হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। কাঁচা ছোলা ফোলেটের একটি
অন্যতম উৎস, এটিক সমস্যা যেমন নিউরাল টিউব ডিফেক্টস প্রতিরোধ করতে সহায়তা
করে।
কাঁচা ছোলা একটি ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার হওয়ায় এটি ত্বক এবং চুলের স্বাস্থ্য
উন্নত করে। কাঁচা ছোলাই থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বক পরিষ্কার করে এবং ত্বক
উজ্জ্বল রাখতে সহায়তা করে। সলাতো থাকা ভিটামিন সি ত্বকের ক্লোজেন উৎপাদন
বাড়িয়ে ত্বক টানটান এবং সতেজ রাখে। ছোলাতে থাকা সালফার ত্বকের জ্বালাপোড়া দূর
করতে সহায়তা করে। খালি পেটে কাঁচা ছোলা নিয়মিত খাওয়ার ফলে চুলের
অকালপক্কতা ও চুল ঝরে পরা রোধ হয়। কাঁচা ছোলা খাওয়ার ফলে সহজে চেহারায়
বার্ধক্যের ছাপ পড়তে দেয় না। বলিরেখা, ফাইনলাইনস কমাতে নিয়মিত খালি পেটে কাঁচা
ছোলা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। কাঁচা ছোলায় রয়েছে ম্যাঙ্গানিজ যা বার্ধক্য
রোধে সহায়তা করে।
কাঁচা ছোলায় বিদ্যমান স্যাচুরেটেড ফ্যাটের নিম্নমাত্রা এবং উচ্চমাত্রায় ফাইবার
রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে। কাঁচা ছোলাতে থাকা ফাইবার খারাপ
কোলেস্টেরল নষ্ট করে এবং ভালো ও কোলেস্টেরল বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। নিয়মিত
খালিপেটে ভেজানো কাঁচা ছোলা খাওয়ার ফলে এটি কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে এবং
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের সহায়তা করে, যার ফলে হার্টের ঝুঁকি অবিশ্বাস্য হারে কমে
যায়। হার্টের সমস্যা বেশি থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া
উচিত।
আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কাঁচা ছোলা হচ্ছে অসাধারণ প্রাকৃতিক
একটি খাবার কাঁচা ছোলায় থাকা আইরন এবং জিংক আমাদের শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে
শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কাঁচা ছোলাতে থাকা জিংক আমাদের
দেহের বিভিন্ন এনজাইমের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। ছোলাতে থাকা আইরন রক্তে অক্সিজেন
অক্সিজেন পরিবহনের ক্ষমতা বাড়িয়ে শরীরকে সুস্থ সবল রাখে এবং বিভিন্ন ইনফেকশন
প্রতিরোধে সহায়তা করে। প্রতিনিয়ত খালি পেটে কাঁচা ছোলা খাওয়ার ফলে আমরা সহজেই
জ্বর, সর্দি-কাশি থেকে সুরক্ষিত থাকতে পারি। এটি কাজের প্রতি মনোযোগ বাড়ায় এবং
ক্লান্ত দূর করে আপনাকে কর্মক্ষম ও সক্রিয় রাখতে সহায়তা করে।
যৌন শক্তি ও কিডনির কার্যকারিতা বৃদ্ধি
কাঁচা ছোলা খাওয়ার অন্যতম একটি উপকারিতা হচ্ছে পুরুষদের যৌন শক্তির
উন্নতি। ছোলায় থাকা প্রোটিন এবং জিংক পুরুষ দেহের টেস্টোস্টোরেন হরমোন বৃদ্ধি
করতে সহায়তা করে এবং যৌন স্বাস্থ উন্নত করে।আমিতো খালি পেটে কাঁচা ছোলা খাওয়ার
ফলে কর্মক্ষমতা বাড়ে, এবং প্রজনন স্বাস্থ্য ভালো থাকে। ছোলায় থাকা প্রোটিন মানব
দেহের মাংসপেশি শক্ত করে এবং শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করে, যা যৌন স্বাস্থ্যের
উন্নতিতে সহায়তা করে। এটি মহিলাদের মনোপজের সময় হরমনের ভারসাম্য বজায় রাখতে
সহায়তা করে। কাচা ছোলায় বিদ্যমান ভিটামিন বি ৬ এবং ম্যাগনেসিয়াম মানসিক চাপ
কমায়।
কিডনির কার্যকারিতা উন্নতিতে কাঁচা ছোলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগীদের জন্য ছোলা একটি পুষ্টিকর উপাদান বা সংযোজন। ছোলার
অনেক ওষুধী গুণ রয়েছে তার মধ্যে একটি হলো কিডনি রোগ থেকে রক্ষা পেতে সহায়তা
করা। কাঁচা ছোলা মানব দেহের রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে, যা যা
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের সাহায্য করতে পারে। কিন্তু মাত্রা কিডনির জন্য জন্য ক্ষতিকর
হতে পারে। যারা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বিটা ব্লকার ব্যবহার করেন তাদের জন্য
উচ্চ পটাশিয়াম যুক্ত খাবার যেমন, ছোলা অল্প পরিমাণে খাওয়া উচিত।
শিক্ষা বাজার এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url